একবার নয় দু-দু’বার মারণ রোগ থাবা বসিয়েছিল তাঁর শরীরে। দু’বারই ক্যানসারকে নকআউট করে দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্রেন স্ট্রোক আর হার্ট অ্যাটাকের ছোবলের সঙ্গে বিপুল লড়েও জেতা হল না অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মার (Aindrila Sharma)। মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার হওয়ার পর আত্মীয় ও অনুরাগীদের আশা জন্মাচ্ছিল, হয়তো এই বার চেতনা ফিরবে তাঁর। কিন্তু তারপরই আবার হার্ট অ্যাটাক। একবার নয়, বারবার। হাজার চেষ্টা করেও কোমা থেকে আর কোনওভাবেই ফেরানো গেল না তাঁকে। না ফেরার দেশে চলে গেলেন বাংলা টেলিভিশনের জনপ্রিয় অভিনেত্রী।
পর পর ২ বার ক্যানসারের সঙ্গে যুদ্ধ করে সেই সংক্রমণ সারিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠা। আবার কাজে ফেরা। লড়াইয়ের অন্যতম নাম ঐন্দ্রিলা। দীপাবলির সন্ধ্যাতেও সেজেগুজে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোকময় ছবি পোস্ট করেছিলেন ঐন্দ্রিলা। কিন্তু তার ১ সপ্তাহের মাথাতেই ১ নভেম্বর ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন অভিনেতা। ১ নভেম্বর রাতে ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন তিনি। তাঁর শরীরের একদিক অসাড় হয়ে যায়। ঘন ঘন বমি করতে থাকেন। অচেতন হয়ে পড়েন। সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে ছোটেন তাঁর পরিবার ও বন্ধু সব্যসাচী চৌধুরী। সেদিন রাতেই অস্ত্রোপচার হয় ঐন্দ্রিলার। তখন থেকেই ভেন্টিলেশনে ছিলেন তিনি।
মাঝে একবার তাঁকে ভেন্টিলেশন থেকে বার করার প্রক্রিয়া শুরু হলেও, শরীরে সংক্রমণ বাড়তেই ফের তাঁকে সি-প্যাপ ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। মাঝে বাঁ হাত ও চোখের পাতা একটু নাড়ালেও, জ্ঞান ফেরেনি ঐন্দ্রিলার। বিশেষ বন্ধু সব্যসাচী চৌধুরী লিখেছিলেন, তাঁর গলা চিনতে পারছেন ঐন্দ্রিলা। তাঁর হার্ট রেট তখন বেড়ে ১৩০-১৪০-এ পৌঁছচ্ছে। সব্যসাচীর ‘এক্সটার্নাল স্টিমুলি’তে ঐন্দ্রিলার সাড়া দেওয়ার খবরে আশায় বুক বেঁধেছিলেন অনুরাগীরা। কিন্তু না, এই ১৫ দিনে একবারের জন্য জ্ঞান ফেরেনি ঐন্দ্রিলার। কোমাচ্ছন্ন ছিলেন তিনি।
২০১৬ থেকে ২০২১, টানা পাঁচ বছর বেশ ভালোই কাটছিল ঐন্দ্রিলা শর্মার। ততদিনে ঐন্দ্রিলার অভিনয় জীবন শুরু গিয়েছে। কিন্তু ২০২১-এর ফেব্রুয়ারিতে হঠাৎই ছন্দপতন। আচমকা ডান কাঁধে যন্ত্রণা শুরু হয় ঐন্দ্রিলার। অভিনেত্রী ভেবেছিলেন শোয়ার দোষে হয়তো ব্যথা। তারপর জানা যায়, ডান ফুসফুসে ১৯ সেন্টিমিটারের একটি টিউমার রয়েছে। আবারও শুরু হয় কেমো, সেই যন্ত্রণা। ২০২১-এর প্রায় গোটা বছরটাই ক্যানসারের সঙ্গে কঠিন যুদ্ধ চালিয়ে ফের জয়ী হন ঐন্দ্রিলা। কাজেও ফেরেন ধীরে ধীরে। কিন্তু ২০২২-এর ১ নভেম্বর রাতে ফের ছন্দপতন। ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন অভিনেতা।
গোটা এই সময়টায় ঐন্দ্রিলার ছায়াসঙ্গী হয়েছিলেন সব্যসাচী চৌধুরী। “মেয়েটা লড়ে যাচ্ছে, সাথে লড়ছে একটা গোটা হাসপাতাল। নিজের হাতে করে নিয়ে এসেছিলাম, নিজের হাতে ওকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাবো। এর অন্যথা কিছু হবে না”, ফেসবুকে লিখেছিলেন তিনি। তা আর হল না। তরুণ অভিনেত্রীর প্রয়াণে শোকস্তব্ধ টলিউড। কেউ অভিনেত্রীর সঙ্গে কাজ করেছেন, কেউ তাঁকে ছোটপর্দায় দেখেছেন। প্রত্যেকেই শোকাতুর। ঐন্দ্রিলার এভাবে চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছেন না তাঁর অনুরাগীরাও।